খাদের কিনারাতেই দাঁড়িয়ে বাফুফে
ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৯৬! ইতিহাসের সর্বনিম্ন! রীতিমতো খাদের কিনারাতেই দাঁড়িয়ে বাঙালির প্রাণের এই খেলা।
ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের সর্বনিম্ন স্থানে গেল দেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকাকে ফেডারেশনের শীর্ষপদে বসিয়েই।
২০০৮ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদে আছেন কাজী সালাউদ্দিন। অথচ নয় বছর আগে সালাউদ্দিন প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র্যাঙ্কিং ছিল ১৫০-এর নিচে।
নয় বছরে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের অনেক স্বপ্নই দেখিয়েছেন সালাউদ্দিন। কিন্তু খুব কম স্বপ্নই বাস্তবের চেহারা দেখেছে। ২০১৬ সালে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনের আগেও বেশ কিছু স্বপ্ন কিংবা পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রায় দেড় বছর অতিক্রম করলেও সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের পথে কতটা এগিয়েছে, সেটি নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকছেই।
২৫ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল সালাউদ্দিনের প্যানেল। তাতে প্রধান বিষয়গুলো ছিল সব বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলার বিষয়টি। ছিল আন্তর্জাতিক মানের জিমনেসিয়াম তৈরি, ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল লিগ আইএসএলের আদলে একটি লিগ চালু করা, আর্থিক সহায়তা দিয়ে নিয়মিত জেলা লিগের আয়োজন করা।
কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজও শুরু করতে পারেনি তাঁর কমিটি। সিলেট বিকেএসপিতে ফুটবল একাডেমির কার্যক্রম শুরু করেও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। জেলা লিগ অনিয়মিত। অনেক জেলায় লিগ হয় নামকাওয়াস্তে। সব মিলিয়ে তৃতীয় মেয়াদেও প্রথম দুই মেয়াদের চেয়ে অবস্থার কোনো পার্থক্য চোখে পড়ছে না।
তবে আশার কথা এখনো শুনিয়ে যাচ্ছেন বাফুফের সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী। আশ্বস্ত করছেন আগামি দুই বছরের মধ্যে ফুটবলের চেহারা পাল্টে দেবেন তাঁরা, ‘নির্বাচনের সময় অনেক কিছু বলা হলেও পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের ব্যর্থতা আছে। তবে ঘরোয়া ফুটবলের যে ক্যালেন্ডারটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটা কিন্তু মেনে চলা হচ্ছে।’
বাস্তবতা অবশ্য অন্য। ঘরোয়া ফুটবল সালাউদ্দিনের আমলে নয় বছর ধরেই মাঠে নিয়মিত আয়োজন করা হলেও সেটিও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সময়সূচি মেনে চলা হয় না। ক্লাবগুলোর চাপে প্রায়ই স্থগিত ঘোষণা করা হচ্ছে। পেশাদার ফুটবল লিগের ধারণা অনুযায়ী হোম-অ্যাওয়ে মাঠে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলার ব্যাপারটিও মেনে চলা হচ্ছে না। হোম-অ্যাওয়ে ভেন্যু দূরে থাক, ঢাকার বাইরে খেলার ব্যাপারেই এখনো ক্লাবগুলোকে রাজি করাতে গলদঘর্ম বাফুফে কিংবা পেশাদার লিগ কমিটির। সময়সূচি মেনে চলাতে অনিয়মের কারণে লিগের পৃষ্ঠপোষক সাইফ গ্লোবার স্পোর্টস ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গত বছর নির্বাচনের সময় এই সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টসের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিনই সালাউদ্দিনের সম্মিলিত পরিষদের পক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন।
সালাউদ্দিন অবশ্য নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকারই করতে চান না। তিনি বলেন, ‘আমি যা যা বলেছিলাম, আপনারা যদি দেখেন প্রতিটি অপারেশনে আছে। এটা কিন্তু চার বছরর প্রোগ্রাম। এক বছর বা দুই বছরের নয়। যুব উন্নয়ন হচ্ছে; এর আওতায় মেয়েরা খেলছে থাইল্যান্ডে। অনূর্ধ্ব-১৬ কাতারে যাবে। অনূর্ধ্ব-১৮ এখন ভুটানে খেলতে গেছে।’
একাডেমি স্থাপনের প্রতিশ্রুতির কথাটা তিনি অস্বীকারই করেছেন। সোজা-সাপটাই বলেন, তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে একাডেমির কোনো কথা ছিল না, ‘আমার ইশতেহারে একাডেমি ছিল না। এটা ফেডারেশনের কাজ নয়। জেলা সংগঠকদের কাজ।’
সালাউদ্দিনের সময়ই ভুটানের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে ৪ ও মালদ্বীপের কাছে খেয়েছে ৫ গোল। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৮ ম্যাচে ৩২ গোল খাওয়াও দেশের ফুটবলে নতুন এক রেকর্ড। অথচ ২০১১ সালেও জাতীয় দল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ঢাকায় লেবাননের মতো শক্তিশালী দলকে ২-০ গোল হারিয়েছিল। সালাউদ্দিনের জমানায় ফুটবল যে উল্টোপথে হাঁটছে, সেগুলো বোঝাতে এই কয়টি তথ্যই যথেষ্ট।